যৌগের রাসায়নিক সংকেত

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - রাসায়নিক বন্ধন | NCTB BOOK

যৌগের একটি অণুতে যেসব পরমাণু থাকে তাদের প্রতীক ও সংখ্যার মাধ্যমে অণুটিকে প্রকাশ করা হয়। যেমন: দুটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু ও একটি অক্সিজেন (O) পরমাণু মিলে পানির (H2O) একটি অণু গঠিত হয়। এখানে, H2O হলো পানির অণুর রাসায়নিক সংকেত। সুতরাং মৌল বা যৌগমূলকের প্রতীক বা সংকেত ও তাদের সংখ্যার মাধ্যমে কোনো যৌগ অণুকে প্রকাশ করাই হলো উক্ত যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical Formula)। এক্ষেত্রে অণুর মধ্যে অবস্থিত মৌলের বা যৌগমূলকের সংখ্যাকে সংকেতের নিচে ডান পাশে ছোট করে (Subscript) লেখা হয়।
রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়ম
 

(a) কোনো মৌলের একটি অণুতে যতগুলো পরমাণু থাকে তার সংখ্যাটি ইংরেজি হরফে মৌলটির প্রতীকের ডান পাশে নিচে ছোট করে লিখতে হবে। যেমন: নাইট্রোজেন অণুতে দুটি পরমাণু থাকে তাই নাইট্রোজেন অণুর সংকেত N2। ওজোন এর একটি অণুতে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে—তাই ওজোন অণুর সংকেত Oz। কিছু মৌল অণু গঠন করে না তাই তাদেরকে শুধু প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়। যেমন: সকল ধাতু। কাজেই আয়রনকে বোঝাতে শুধু Fe লিখতে হবে। আবার, নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোও অণু গঠন করে না, তাই হিলিয়ামকে বোঝাতেও শুধু He লিখতে হবে।
 

(b) কখনো কখনো কোনো যৌগের অণু দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণু দিয়ে গঠিত হয়। তাদের যোজনী যদি কোনো সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য না হয় তাহলে দুটি মৌলের প্রতীক পাশাপাশি লিখে একটি মৌলের প্রতীকের পাশে অন্যটির যোজনী লিখতে হয়। যেমন: অ্যালুমিনিয়ামের যোজনী 3 এবং অক্সিজেন এর যোজনী 2। যোজনী দুটি কোনো সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়। যদি অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত কোনো যৌগের সংকেত লিখতে হয় তবে অ্যালুমিনিয়ামের প্রতীক Al এর নিচের দিকে ডান পাশে অক্সিজেনের যোজনী ছোট করে লিখতে হবে এবং অক্সিজেনের প্রতীক ০ এর নিচের দিকে ডান পাশে অ্যালুমিনিয়ামের যোজনী ছোট করে লিখতে হবে অর্থাৎ এর সংকেত হবে Al2O3। অনুরূপভাবে ক্যালসিয়ামের যোজনী 2 এবং ক্লোরিনের যোজনী 1। সুতরাং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত CaCl2 হওয়ার কথা, 1টি লিখতে হয় না বলে আমরা লিখি CaCl2। আবার, ম্যাগনেসিয়ামের যোজনী 2 এবং ফসফেটের যোজনী 3। সুতরাং ম্যাগনেসিয়াম ফসফেটের সংকেত Mg3(PO4)2। উল্লেখ্য যে, কোনো যৌগমূলক একাধিক সংখ্যক থাকলে যৌগমূলকটিকে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে রেখে তারপর সংখ্যা লিখতে হয়। যেমন: অ্যামোনিয়াম ফসফেট (NH4)3 (PO4)1 বা (NH4) 3 PO4, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট Al2(SO4)3 ইত্যাদি।
 

(c) যদি দুটি মৌলের যোজনী কোনো সাধারণ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য হয় তাহলে যোজনীগুলো সেই সাধারণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে মৌলের পাশে পূর্বের নিয়মে ভাগফলটি লিখতে হয় যেমন: কার্বন ও অক্সিজেন দিয়ে গঠিত যৌগ কার্বন ডাই-অক্সাইড। কার্বনের যোজনী 4 এবং অক্সিজেনের যোজনী 2 কার্বনের যোজনীকে 2 দিয়ে ভাগ করলে 2 পাওয়া যায় আবার অক্সিজেনের যোজনীকে 2 দিয়ে ভাগ করলে 1 পাওয়া যায়। এখন প্রথম নিয়মের অনুযায়ী কার্বনের সংকেত C এর নিচে ডান পাশে 1 এবং অক্সিজেনের নিচে 2 লিখতে হবে। কিন্তু সংকেত লেখার সময় যেহেতু 1 সংখ্যাটি লেখার প্রয়োজন নেই তাই কার্বন ডাই-অক্সাইডের সংকেত হবে CO2 I ফেরাস সালফেট যৌগে আয়রনের যোজনী 2 সালফেট আয়নের (SO22) যোজনী 2। এই সংখ্যা দুটিকে 2 দিয়ে ভাগ করে 1 ও 1 পাওয়া যায়। সুতরাং ফেরাস সালফেটের সংকেত FeSO4 । বোরন ও নাইট্রোজেনের যোজনী 3 । এদের ও দিয়ে ভাগ করলে 1 ও 1 পাওয়া যায় সুতরাং বোরন নাইট্রাইডের সংকেত B1N1=BN

Content added By
Promotion